“রহস্য! অপরাধের সঙ্গে রহস্যের কোনও সম্পর্ক নেই, 
যদি তার তদন্তে বুদ্ধি প্রয়োগ করা হয়।” — এক বিকেলে নরফোক স্ট্রিটে এবিসি টিউহাউসের এক কোণে বসে ‘ইভনিং অবজ়ার্ভার’ সংবাদপত্রের তরুণী সাংবাদিক পলি বার্টনকে কথাটা বলেছিলেন এক সাধারণদর্শন‚ বৃদ্ধ ভদ্রলোক।

খবরের কাগজের কাজ আর দুপুরের খাওয়া থেকে মনোযোগ সরিয়ে দেওয়ার জন্য বৃদ্ধকে মনে-মনে ক্ষমা করে দিয়ে মিস বার্টন জানতে পারেন‚ খ্যাপাটে এই বৃদ্ধের মধ্যে অনুসন্ধানের ঈশ্বরপ্রদত্ত ক্ষমতা রয়েছে ― পুলিশ যে রহস্যগুলো ভেদ করতে গিয়ে হিমশিম খেয়েছে‚ তা তিনি চায়ের টেবিলে বসে তুড়িতে সমাধান করেন।....সপ্তাহের পর সপ্তাহ কাটে। বিভিন্ন বিচিত্র অপরাধের রহস্যের জট কাটানোর কথা মিস বার্টন তাঁর মুখে শোনেন। কেবল রয়ে যায় একটিই রহস্য: কোণে বসা ওই বৃদ্ধ নিজে।

20 October 1908 প্রথম প্রকাশিত, ব্যারনেস এমুস্কা অর্কজ়ি-এর লেখা “দ্য ওল্ড ম্যান ইন দ্য কর্নার” - দ্য টিহাউস ডিটেকটিভ সিরিজ ১ — এই ক্লাসিক গোয়েন্দা-গল্প সংকলনটি রহস্য-সাহিত্যের ইতিহাসে একটি বিশেষ স্থান দখল করে আছে। শার্লক হোমস বা হারকিউল পোয়ারোর মতো ঐতিহ্যিক গোয়েন্দাদের ভিন্নধর্মী একটি রূপ এখানে পাওয়া যায় — নামহীন, অদ্ভুত এক বৃদ্ধ, যিনি কখনো কোনো অপরাধস্থলে যান না, কোনো সাক্ষীর সঙ্গে কথা বলেন না, তবুও জটিলতম অপরাধের সমাধান করে ফেলেন অবিশ্বাস্য যুক্তি ও পর্যবেক্ষণভিত্তিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে।

কাহিনির মূল কাঠামো :

লন্ডনের এক ব্যস্ত চায়ের দোকানের কোণের টেবিলে বসে থাকেন এই রহস্যময় বৃদ্ধ। তিনি সবসময় দড়ির গিঁট নিয়ে বুঁদ হয়ে থাকেন — যেন তাঁর মনোযোগ অন্য কোথাও নেই। কিন্তু সাংবাদিক পলি বার্টন যখন তাঁর সঙ্গে কথোপকথনে জড়িয়ে পড়েন, তখন তিনি বিস্ময় নিয়ে দেখেন কীভাবে এই শান্ত, নিঃশব্দ মানুষটি শুধু খবরের কাগজে প্রকাশিত তথ্যের ওপর নির্ভর করে জটিল হত্যাকাণ্ড, অপহরণ, চুরি, প্রতারণা ও পারিবারিক ষড়যন্ত্রের অন্তর্নিহিত সত্য তুলে ধরেন।

গল্পের বৈশিষ্ট্য ও আকর্ষণ :

• অফ-স্টেজ গোয়েন্দা: অরসি এমন একজন গোয়েন্দা তৈরি করেছেন, যিনি ঘর ছাড়াই অপরাধ সমাধান করেন—পুরোপুরি যুক্তি ও বুদ্ধিভিত্তিক ডিটেকশন।
• কথোপকথনভিত্তিক বিবরণ: প্রতিটি রহস্য আসলে এক ধরনের বৌদ্ধিক দ্বন্দ্ব—বৃদ্ধ ও পলি বার্টনের মধ্যে কথোপকথনের মাধ্যমে unfold হয়।
• মনে দাগ কাটার মতো পরিবেশ: ভিক্টোরিয়ান যুগের লন্ডনের আবহ, সামাজিক স্তরবিন্যাস, অপরাধজগতের ছায়া—সব মিলিয়ে গল্পগুলো এক অদ্ভুত মনস্তাত্ত্বিক চাপ তৈরি করে।
• আড়ালে লুকানো সত্য: প্রতিটি রহস্যের সমাধান যেমন চমকপ্রদ, তেমনি শেষদিকে বৃদ্ধের নিজের চরিত্রটি নিয়েও একটি সন্দেহের পর্দা তৈরি হয়—তিনি কি সত্যিই শুধু একজন নিরীহ পর্যবেক্ষক?

কেন এই বইটি বিশেষ ?

ব্যারনেস এমুস্কা অর্কজ়ি এই বইয়ে প্রচলিত গোয়েন্দা-গল্পের কাঠামোকে ভেঙে বুদ্ধিনির্ভর রহস্যের নতুন ধারা প্রতিষ্ঠা করেন। “দ্য ওল্ড ম্যান ইন দ্য কর্নার” শুধু অপরাধ সমাধানের গল্প নয়; এটি মানবস্বভাব, সামাজিক বাস্তবতা ও নৈতিক জটিলতার গভীর অনুসন্ধানও। পাঠক বারবার চিন্তায় পড়ে যান, সব রহস্য কি সত্যিই সমাধান হয়েছে, নাকি আরও গভীরে কোনো অদৃশ্য গল্প লুকিয়ে আছে? 

গোয়েন্দা ও রহস্যসাহিত্যের অনুরাগীদের জন্য এটি এক অনন্য, স্মরণীয় ও বৌদ্ধিকভাবে তৃপ্তিদায়ক পাঠ। 

ভাষান্তর: দীপ্তজিৎ মিশ্র

প্রচ্ছদ: সুমন সরকার